Monday, December 23, 2013

বাউরী বাতাস বাউরী বাতাস

বাউরী বাতাস বাউরী বাতাস
মন পবনে ঝড়
বুকের মাঝে বাইন্ধাছে ঘর
বাউল কারিগর
আমি পথের মাঝে সন্ধান করি
পথের পথিকবর।।

আমার নাই রে আপন নাই রে স্বজন
সঙ্গী যে একতারা
আউল বাউল মনটা আমার
রূপের পাগলপারা
আমি অকূল কূল খুঁইজা মরি
অচিন রূপনগর।।

আমার নাই রে বাড়ি নাই রে দ্বারি
বান্ধি যে ঘর পথে
জলিল বলে বসত আমার
ভাবের ভাবনারথে
আমি সবার মনে বাঁধন গড়ি
ভুইলা আপন পর।।

শেখ জলিল ১৩.১০.২০১৩

Monday, December 9, 2013

আশ্বিনে নয়, কার্তিকে নয়

আশ্বিনে নয়, কার্তিকে নয়
আইসো বন্ধু পউষে
বিহান বেলার রোদ পোহাবো
বইসা মনের হাউসে
তুমি আইসো বন্ধু পউষে।।

সারা রাইতের শীতের পরে
বিহান বেলার রোদ
দেহের মাঝে উষ্ণ ছড়ায়
বাড়ায় স্পর্শ বোধ
তুমি থাইকো বন্ধু একটু পাশে
সুখের তখত তাউসে।।

কইও কথা মিষ্টি তেতো
সারা দিনমান
খেলবো পাশা দুজন মিলে
ভরবে মনপ্রাণ
তুমি গাঁইথো মালা গোলাপ-গাঁদার
রাঙা ফুলের ঢাউসে।।

শেখ জলিল   ০৯.১২.২০১৩

Wednesday, November 13, 2013

মিশে যাও মানুষে

মিশে যাও মানুষে
যদি বন্ধু পেতে চাও
কে আসল কে নকল
মুখোশ দেখে নাও
দেখো আকাশে বাতাসে ভাসে
অবিশ্বাসের বাও।।

বুঝবে না তুমি বুঝবে না
কাছে থাকলেও শত
কার হৃদয়ে তেতো বিষ
বিশ্বাস ভঙের ক্ষত
তাই হাতের নাগালে যাও চলে
পাঁজরে পাঁজরটা মিলাও।।

জানবে না তুমি জানবে না
মনে জমা কতো খেদ
পকেটে লুকানো ছুরি
করতে পারে বুক ভেদ
তাই চোখের গভীরে দেখো চেয়ে
নজরে নজরটা মিলাও।।

শেখ জলিল    ১৩.১১.২০১৩
 

Tuesday, October 29, 2013

আমরার আবু কান্দে রে

আমরার আবু কান্দে রে
আম দিতাম কাঁডল দিতাম
পথো পথো খাইতো।।

আমরার আবু কান্দে রে
নাইকা হূতির পিরান
ঘাইম্মা ওডে নরম শরীল
লইও এট্টু জিরান
তালের একখান পাহা দিতাম
হউরী বাতাস দিতো।।

আমরার আবু কান্দে রে
হাতো দইয়ের খুডি
থইলার ভিতরে গুয়া মুড়ি
চ্যাপা শুটকি পুডি
গানের একখান ঘাডু দিতাম
নাইচ্চা গাইয়া নিতো।।

আমরার আবু কান্দে রে
লইয়াম সোনার পুরী
ভাটির দ্যাশের রাজার কন্যা
নাইকা রূপের জুড়ি
তাঁতের একখান শাড়ি দিতাম
তারেই পরাই দিতো।।

শেখ জলিল   ০৯.১০.২০১৩

Monday, September 30, 2013

ছাতিম গাছের মাথায় কাক

ছাতিম গাছের মাথায় কাক
কা-কা রবে পাড়ছে ডাক
খোকন সোনার বিয়ে দেবো না
কনের বায়না নেবো না।
বাঁশের ঝাড়ে বকের ছা
যা বগি তুই দূরে যা
খোকার দিকে নজর দিও না
শখের খেলনা নিও না।।

আসবে ছুটে রাজার ঘোড়া
মোদের ঘোড়াশালে
পালকি নিয়ে ছয় বেহারা
হাঁটবে দুলকি চালে
ঘটক বাবুর মাথায় টাক
বাজবে ঢোলক বিয়ের ঢাক
খোকার বারাত ফিরে চেয়ো না
তোমরা দুঃখ পেয়ো না।।

বাড়ির পাশে তেঁতুল গাছে
কুটুম বাসা বাঁধে
আড়বাঁশিতে খোকন সোনা
শ্যামের গীতি সাধে
রাইবিনোদীর বেজায় রাগ
হঠাৎ করে থামলে ঢাক
তোমরা স্তব্ধা খেও না।।

শেখ জলিল  ০৭.০৯.২০১৩

Tuesday, August 27, 2013

ও মন ঘর যদি প্রশান্ত

ও মন ঘর যদি প্রশান্ত তোমার
দুনিয়া হবে স্বর্গ
ঘরের কোণেই চার নয়নে
দুই হৃদয়ের বর্গ।।

দেখবে যদি দুনিয়াটাকে
ঘরকে দেখো সবার আগে
কোঠায় কোঠায় নকশী আঁকা
হৃদকলমের দাগে।
আবার অযত্নে সব রত্নহারা
অচল সোনার মর্গ।।

ভাববে যদি দূর সন্ন্যাসে
ঘরকে রাখো মনের বাসে
নিজ নিবাসে ঠিক করে নাও
প্রেম হৃদয়ের পাশে।
আবার ঘরেই দেখো বিরানভূমি
ভুল মানুষের চর গো।।

শেখ জলিল    ২৭.০৮.২০১৩

Thursday, August 15, 2013

এই ধরাতে এসে

এই ধরাতে এসে মানুষ শুধু একা
বিশ্বাস মাঝে বিশ্বাস রুয়ে
চিবুকের সাথে চিবুক ছুঁয়ে
খণ্ডিত হয় ভাগ্যরেখা
সব যাপিত দিনের লেখা।।

নিজ পাঁজরের হাড় ঘষে
বানালে যে কৃষ্টি
কষ্ট শেষে হবে তোমার
সবই অনাসৃষ্টি
বিশ্ব খুঁজে পাবে না আর
সেই স্বজনের দেখা।।

ভুল মানুষের মন খুঁজে
হারালে যে দৃষ্টি
অন্ধ চোখে হবে না আর
নতুন আলো সৃষ্টি
যাত্রাশেষে ডাকবে মরণ
অচিন পথের রেখা।।

শেখ জলিল   ১৫.০৮.২০১৩

Tuesday, July 23, 2013

আমি এই শহরের সব ঘরে ঘরে

আমি এই শহরের সব ঘরে ঘরে
আগুন জ্বালিয়ে দেবো
আমার প্রেমের অপমানের
প্রতিশোধ নেবোই নেবো
আমি মানবো না পরাজয়
মনে জ্বলছে বরাভয়।।

ভেবো না তুমি হবো দেবদাস
নিজেকে করবো ধ্বংস
তোমার প্রেমিক সন্ধানীদের
করে দেবো নির্বংশ
আমায় হারানো সহজ নয়
জানি আমারই হবে জয়।।

ভেবো না তুমি বিরহে তোমার
বুকে পাথর চেপে রাখবো
তোমার পাপের শেষ না দেখে
আঁধারে দু’চোখ ঢাকবো
সেদিন আসবে যে নিশ্চয়
যেদিন প্রেমেরই হবে জয়।।

শেখ জলিল  সেপ্টেম্বর, ২০০৫

Wednesday, July 10, 2013

কতোটুকু পায় মানুষ

কতোটুকু পায় মানুষ
দুহাতে উড়ায়ে ফানুস-
যাপিত জীবন শেষে মৃত্যু-বেদনা ছাড়া
আরও বেশি, বেশি কিছু আছে কি?।

যতোটুকু প্রাপ্তি তার শৈশব-কৈশোরে
তারও বেশি সে হারায় বৃদ্ধে ও প্রৌঢ়ে
হারানোর ব্যথা ছাড়া সুখেরই পরশে
বুকের পাঁজরে প্রাণ বাঁচে কি?।

যতোটুকু সন্ধি তার যৌবনে বন্ধনে
তারও বেশি আলোড়ন বিরহ ক্রন্দনে
মিলনের জ্বালা ছাড়া রাতেরই প্রহরে
অযাচিত সুখ কেউ যাচে কি?।

শেখ জলিল        ০৯.০৭.২০১৩

Saturday, June 15, 2013

বন্ধু তোদের

বন্ধু তোদের পাকা ঘরখানা
আমার না হয় মাটির বিছানা
দুঃখ নেই তাতে
বুকে আগলে রেখেছি তোদের
প্রিয় প্রিয় ছবি মুখটা চাঁদের
শৈশব স্মৃতিটাকে।।

কতো না খেলেছি ধুলোকাদা মেখে
গায়ের কাপড় নদীপাড়ে রেখে
বেনোজলে দিয়েছি ঝাঁপ
মার্বেল টিপ, ডাংগুলি খেলে
পাড়ার সকল ডানপিটে ছেলে
দিনকে করেছি রাত।
আজো দেখি সব নতুনের মুখে
রয়েছি ভালো এই বেশ সুখে
ছোট্ট নদীর বাঁকে।।

জানি আর তোরা আসবি না ফিরে
দেখতে সবুজ প্রিয় গ্রামটিরে
ভুল করে একটিবার
তবুও তোদের করি আমন্ত্রণ
চড়ুইভাতির ভরা নিমন্ত্রণ
রেখেছি খোলা দুয়ার।
আজো মনে পড়ে বন্ধু তোদের
পেয়েছি কাছে জীবনে যাদের
হাতে হাতখানি রেখে।।

শেখ জলিল    ১৫.০৬.২০১৩

Thursday, May 23, 2013

ও হায়, রঙের মানুষ

ও হায়, রঙের মানুষ ওড়ায় ফানুস
রঙে ভরা নীলিমায়
ছিঁড়লে সূতো হারিয়ে যাবে
স্বপ্ন ঘুড়ি অজানায়।।


গল্পকথায় হৃদয় বরণ
সুখের তরে সঙ্গী ধারন
আবার দুঃখনীলে একলা মরণ
মানুষের কারণ।
দেখি কর্মে কর্মে কতো যে রূপ
মর্মে মর্মে ভরা অসুখ
রঙ্গরসের কামনায়।।


ছোট-বড়ো জাতের বিচার
উচ্চ-নীচ ভেদের আচার
আবার ধনী-গরীব মানুষ বোঝার
সম্পদের বাহার।
দেখি বর্ণে বর্ণে কতো অমিল
ধর্মে ধর্মে আঁটা যে খিল
কর্মভেদের দুনিয়ায়।।


শেখ জলিল   ২১.০৫.২০১৩

Wednesday, May 1, 2013

পরিযায়ী চোখে ভাসে

পরিযায়ী চোখে ভাসে বারোয়ারি রং
মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ চমকে যেমন
কেমনে বোঝাই বলো ভুলেরই কারণ
ব্যথা অনুরণন।।

জ্যৈষ্ঠে খরতাপ, শ্রাবণেতে বৃষ্টি
পলকে পলকে বাড়ে কীযে অনাসৃষ্টি!
যদিবা রই ঝুলে
আশ্বিনে কাশফুলে
রাখে না রাখে না কারও
স্মৃতি অনুস্মরণ।।

অঘ্রাণে সোনা রং, মাঘ রাতে শিহরণ
যাচে না হৃদয় কারও বুনো সমর্পণ!
যদিবা ফুল হাসে
নিদারুণ চৈত মাসে
করে না করে না মন
নববর্ষ বরণ।।
 
শেখ জলিল ০১.০৫.২০১৩

Saturday, April 13, 2013

ছয় ঋতুতে ছয়টি রূপে


ছয় ঋতুতে ছয়টি রূপে
সাজে কোন্ সে দেশ
শুনছো নি সেই দেশেরই নাম
রূপের বাংলাদেশ
আমার সোনার বাংলাদেশ।।

গ্রীষ্ম এলে মিষ্টি ফলে
ভরে সবার মুখ
বর্ষা তুখোড় বৃষ্টি মুখর
মনে ঝরায় সুখ
আবার শরৎকালে কাশের ফুলে
পরায় শুভ্র বেশ।।

হেম-হেমন্তে দিগ-দিগন্তে
ফসল কাটার ধুম
শীতের পিঠা মধুর মিঠা
নেয় যে কেড়ে ঘুম
আবার বসন্তেরই রং-বাহারি
ফুলের নেইকো শেষ।।

শেখ জলিল           ১৮.০৬.২০১২


Tuesday, April 9, 2013

এই সবুজ-শ্যামল দেশের বুকে

এই সবুজ-শ্যামল দেশের বুকে
প্রাণের মায়া রাশি রাশি
যেখানেই যাই যতো দূরে
বারবার ফিরে শুধু আসি
ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ
আমি তোমাকেই ভালোবাসি।।

চেয়ে দেখি কতো রং কতোনা ছবি
ঘুরে ঘুরে নানা দেশ সারা পৃথিবী
তবু প্রিয় পতাকা এই লাল-সবুজ
যখনই হই পরবাসী।।

তুমি যে আমার মা স্বদেশভূমি
যখনই কাছে পাই মাটিকে চুমি
মাগো তোমার বুকেতে জীবন-মরণ
আনন্দ-বেদনা-হাসি।।

শেখ জলিল      ০৯.০৪.২০১৩
 

Wednesday, April 3, 2013

দিকহারা ছেঁড়া পালে

দিকহারা ছেঁড়া পালে লেগেছে হাওয়া
ভাবছে হিসেবী মন চাওয়া-পাওয়া
ভুলেছে চলার পথ, ঢেউয়েতে উল্টো রথ
হবে না হবে না ছোট তরী বাওয়া।।

অদূরে প্রবাল দ্বীপ সবুজে ঘেরা
বন্দী পাখিটা বনে বেঁধেছে ডেরা
ইচ্ছে ঘুড়িটা তার নাটাই ছেঁড়া
দূরবীণ চোখে চোখ লক্ষ্মী টেরা
হয়েছে বিবাগী মন, দূরে চেয়ে অনুক্ষণ
হবে না হবে না প্রেমদ্বীপে যাওয়া।।

হাজারও কথার মিল জেগেছে সুরে
ছন্দ তুলেছে তান হৃদয়পুরে
দেখেছে কতোনা চেয়ে আসর ঘুরে
স্বপ্নছবিটা ছিলো দুচোখ জুড়ে
হেরেছে পাগল মন, শুনে তার অনুরণ
হবে না হবে না সুখছোঁয়া পাওয়া।।

শেখ জলিল         ০৩.০৪.২০১৩

Friday, March 22, 2013

খুব কষ্ট লাগে ভোরে

খুব কষ্ট লাগে ভোরে
অন্তরে পাঁজরে
যদি দেখি সব যাচ্ছে চলে
নষ্টের গহ্বরে!
মনুষ্য সমাজে কীট
খুলছে হিংসার গিঁট
দেয়ালে ঠেলছে পিঠ
দরিদ্র জনেরে।

খুব ব্যর্থ লাগে মনে
মননে স্বপনে
যদি বুদ্ধিজীবি বেশ্যা হয়
কথনে শ্রবণে!
যদি দেখি তার ধর্ম
যত হিংসা-দ্বেষ-বর্ম
সমাজের সারে কর্ম
নিরীহ দশেরে।

খুব দুঃখ লাগে প্রাণে
একাকী গোপনে
যদি দেখি কারো অবহেলা
দুচোখের কোণে!
প্রথম প্রেমের ফুল
ছিঁড়ে গেছে বৃন্তমুল
পেয়েছে সুখের কূল
মালা গেঁথে অন্যেরে।

খুব কান্না আসে চোখে
আঁধারে নিরলে
যদি বিশ্বাসের প্রেম ভাসে
সন্দেহের জলে!
যে আমার প্রিয়তমা
বার বার করে ক্ষমা
রেখেছি অন্তরে জমা
তার বিরহেরে।

শেখ জলিল   ১৪.০৩.২০১৩

Thursday, February 14, 2013

কিছু ভুল সময়ের ভালোবাসা

কিছু ভুল সময়ের ভালোবাসা
কিছু ভুল ক্ষণিকের কাছে আসা
করেছে হৃদয়টাকে বাউল
ঘরছাড়া এক পথিক বেভুল
বুকে প্রেম সর্বনাশা।।

কিছু হেলা আর অবহেলা
কিছু চাওয়া আর না-চাওয়া খেলা
গড়েছে জীবন কেড়েছে স্বপন
ডুবে ডুবে জলে ভাসা।।

কিছু স্মৃতি আর অপস্মৃতি
কিছু পাওয়া আর না-পাওয়া ভীতি
ডেকেছে মরণ রেখেছে স্মরণ
পটে পটে ছবি ঠাসা।।

শেখ জলিল      ১৪.০২.২০১৩

 

Monday, January 28, 2013

আয় লো সখি

আয় লো সখি দোলনায় দুলি
ভাবের আঙিনায়
ভাব জইমাছে সারা অঙ্গে
বুকের পিঞ্জিরায়
সখি, আয় লো কাছে যায়
ভাবের সময় চইলা যায়।।

ভাবে মইজা শ্যামে রাধার নামে
হইলো দিশেহারা
আমি কী আর চাই বাঁচিবার
তোরই সঙ্গ ছাড়া
প্রেমের উথাল হাওয়া সকল চাওয়া
সখি তোরে চায়।।

প্রেমে ইউসুফ নবী পেলো যে কী
রূপ জুলেখার মাঝে
দুনিয়াদারী পরপারই
ভুইলা গেলো সাঁঝে
মনের ভাবের গতি প্রেমের রীতি
বোঝা বিষম দায়।।

শেখ জলিল ২৩.০১.২০১৩