Friday, December 16, 2016

আমি হাজার বছর পথ চলে

আমি হাজার বছর পথ চলে
দাঁড়িয়েছি এই সমতল আর বরেন্দ্র অঞ্চলে
ছিলো কত নাম গৌঢ়, হরিকেল, সমতট, বঙ্গদেশ
যুদ্ধে, সংগ্রামে পেয়েছি শেষে সোনার বাংলাদেশ।।

করেছে শাসন পাল সেনাদল
করেছে শোষণ তুর্কী-মোগল
এসেছে বর্গী, লুটেছে পাকিস্তান
তবু বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা
দেয়নি তাদের স্থান
মুক্তিযুদ্ধে সমুখ সমরে পরেছে বীরের বেশ।।

রেখেছি দুহাত সবার হাতে
মানিনি বারণ ধর্মভেদে
গড়েছি স্বদেশ দিয়ে এই মনোপ্রাণ
আজও রাখবো তেমন সোনার এ দেশের
উচ্চেতে সম্মান
থাকবে না আর ধনী-গরিবে কোনো হিংসা লেশ।।

শেখ জলিল ০৬.১২.২০১৬


Tuesday, December 6, 2016

স্বাধীনতা, তোমার বয়স বেড়েছে ঢের

গণনার হিসেবে তোমার বয়স বেড়েছে ঢের
যদিও চিরযৌবন কামনা তোমার আজীবন, তবু
দীর্ঘ পঁয়ত্রিশে চৌদ্দ কোটি সন্তানের হয়েছো জনক
বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ যেমন দায়িত্বে অটল সারাক্ষণ
জমায় গহন বুকে ভালোবাসার উত্তাপ অহর্নিশ
বটবৃক্ষ যেন তুমি এক দাঁড়িয়ে সংসারে অবিচল
ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরছো শেষে, তবু কেন আজো
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা নিতান্ত অপ্রতুল?

জন্মের সময় তুমি চেয়েছিলে সার্বভৌমত্বের স্বাদ
সোনাফলা জমি, নিজস্ব ভাষার প্রয়োজন ছিলো বেশি
কুলুকুলু নদীর জোয়ার, মায়ের আদর, বোনের সোহাগ
বাবার অপত্য স্নেহ, ভাইয়ের সাহসী দু’হাত কাছে পেয়ে
পরাধীনতার শৃঙ্খলটা ভেঙে দিলে তুমি তুমুল চিৎকার-
সেদিন তোমার কণ্ঠ শুনেছিলো পৃথিবীর তাবৎ মানুষ
একমাত্র তুমি ছিলে প্রধান বক্তা মঞ্চের মাঝখানে
কী যে অবাক বিস্ময় ছিলো জনতার জাগ্রত দু'চোখে!

তোমার ভুখন্ড দখলের বিদেশী চরেরা নেই কোনোখানে
বর্গী-ইংরেজরা হটে গেছে, গেছে পাকিস্তিানী হানাদার
এখন আমরা তোমার উর্বরা জমিনের কর্ষ অপেক্ষায়
জারি-সারি-ভাটিয়ালি গানের মাহেন্দ্র সুর মূর্ছনায়
প্রকম্পিত করবে প্রান্তর চারদিক, সেই প্রতীক্ষায়
জেগে আছি তিন যুগ প্রতিটি দুয়ারে কান পেতে স্থির-
আমরা সবাই সেই মধ্যবয়সী কিষাণ-কিষাণীর মতো
খরা ও বন্যার শেষে আশা করি অবিরাম ফসলের
আমাদের সবুজ নিবাসে স্বপ্নেরা হয়েছে দীর্ঘতর আরও
তোমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাইছে আজ জনতার দাবী।

হে স্বাধীনতা, বয়স্ক বটের মহীরূহ ছায়া শুধু নও
নও শুধু সার্বভৌম সীমানা প্রাচীর এ বাংলার-
আমাদের চাই ফুলে ফলে ভরা ঊর্বশী গাছের সারি
মাঠে মাঠে ফসলের শোভা, কনক ধানের হাসি
গাঁয়ের দীঘল পথ, পরিপাটি শহর, উন্মুক্ত রাজপথ 
সন্ত্রাস-শোষণহীন এক স্বদেশ, অভয়ে পথচলা।
তোমার মুখের প্রতিশ্র“তি হোক ন্যায্য অধিকার আরও
আমাদের মাটির কুটিরে আসুক স্বস্তির ঘুম প্রতিরাতে
প্রতিটি প্রজন্ম পাক দু'বেলা দু'মুঠো ভাত-মাছ-ডাল
হে স্বাধীনতা, তবেই না তুমি আমাদের প্রগাঢ় অহংকার!  

শেখ জলিল ০৯.১২.২০০৬

Monday, December 5, 2016

যখন ঝিঁঝি ডাকা ভরদুপুরে

যখন ঝিঁঝি ডাকা ভরদুপুরে
শাপলা ঝিলে তালপুকুরে
কলমি দামে মনের সুখে
পানকৌড়ি দেয় ডুব
আমি মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখি
এই বাংলার মুখ
আহা! কী যে অপরূপ।।

যখন ছেলেমেয়ে নাইতে এসে
দেয় জলে ঝাঁপ মুচকি হেসে
নদীর বুকে ঢেউ তুলে যায়
জড়িয়ে মনের সুখ
আবার পালতোলা নাও উজান পানে
ভাটিয়ালি-সারি গানে
প্রাণের মাঝে জমিয়ে রাখা
দেয় মুছে  সব দুখ
আমি মুগ্ধ চোখে.........।।

যখন দোয়েল পাখি শিস্ দিয়ে গায়
বনের সবুজ শ্যামল ছায়ায়
সঙ্গী নিয়ে ঘোরে যখন
লাগে ভালো খুব
আবার হিজল গাছে একলা বসে
মাছরাঙ্গাটি হিসাব কষে
ধরতে শিকার ঘাপটি মেরে
থাকে যে নিশ্চুপ
আমি মুগ্ধ চোখে..........।।

শেখ জলিল ০৫.১২.২০১৬

Saturday, December 3, 2016

এই বাংলাদেশের মাটি

এই বাংলাদেশের মাটি
খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি
লাখো শহীদের প্রাণদানে পেয়েছি
দেশটাকে পরিপাটি।।

দিয়েছে তীতুমীর অকাতরে প্রাণ
লড়েছে প্রীতিলতা দেয় নিকো মান
ছেড়েছে ব্রিটিশ-পাকসেনা যত
লয়ে নিজ ঘটিবাটি।।

করেছে যুদ্ধ মুক্তিসেনায়
গড়েছে দূর্গ শ্যামল ছায়ায়
দিয়েছে জীবন করছে দখল
জ্বেলেছে শত্রুঘাঁটি।।

প্রিয় স্বাধীনতা নয় কারো দান
তিরিশ লক্ষ প্রাণের সমান
তাঁদেরই গড়া এ মুক্ত জমিনে
মোরা সুখে পথ হাঁটি।।

শেখ জলিল ২৮.১১.২০১৬


Thursday, December 1, 2016

হে বাংলাদেশ

হে বাংলাদেশ তুমি রয়েছ আমার বিশ্বাসে
রয়েছ নিঃশ্বাসে আমার প্রতিটি যাপিত দিবসে
পরবাসভূমে আছি এত পথ এত খানি দূরে
তবু তোমারই সঙ্গীত বাজে বুকে হৃদপুরে
তুমি আদিগন্ত নীল উন্মুক্ত আকাশে
তুমি দম নেয়া স্বস্তি দখিনা বাতাসে
তোমার সুখেই এখনও আনন্দ ফিরে আসে
তোমার দুঃখেও এখনও দুচোখ জলে ভাসে।

যত দূরে যাই তবু ফিরে চাই প্রিয় সেই সোনাদিয়া
কাজলা গরুর পিছে ছুটে চলে আমার রাখাল হিয়া
তৃষ্ণার্ত দুঠোঁট খোঁজে লৌহজংগের আঁজলাভরা জল
বুকের তোরঙ্গ ভেঙে বয়ে চলে নদী- ঝরণার কলকল
তুমি আমি যেন জন্ম জন্মান্তরে হেঁটে চলা শক্তিবল, ভালোবাসা ছল।

স্বাধীনতা ক্ষণে, বিজয়ের মধুমাসে বলি
ভালো থেকো, ভালো থেকো বাংলাদেশ
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিও তোমার খ্যাতির অশেষ
রেখো না অন্তরে তুমি কারো প্রতি দুঃখ-শ্লেষ
যদি পারো মরণের পরে ফিরিয়ে নিও তোমার
অবাধ্য প্রবাসী দুর্ভাগা সন্তানের দেহাবশেষ।

শেখ জলিল ০১.১২.২০১৬