Thursday, July 27, 2017

বারবার ফিরে যাই স্বর্ণালী শৈশবে

Image result for নদীতীরে ভালোবাসা
বারবার ফিরে যাই স্বর্ণালী শৈশবে
বারবার ফিরে যাই কৈশোরে গৌরবে
আজও আমি ফিরে যাই উত্তাল যৌবনে
মনে পড়ে চাঁদমুখ স্মৃতিঝরা এই ক্ষণে।।

খেলেছি যে কত খেলা গেঁয়ো পথ প্রান্তরে
দেখেছি যে কত মেলা দুটি চোখ প্রাণ ভরে
ধরেছি যে কত হাত মিছে ছল ভান করে
ঘুরেছি যে দুজনায় নদীতীরে কাশবনে।।

বলেছি যে কত কথা নির্জনে বসে বসে
পেয়েছি যে কত ব্যথা না-দেখায় দিন শেষে
চেয়েছি যে কত প্রেম তোমাকেই ভালোবেসে
গড়েছি যে ছায়ানীড় হৃদয়েরই দর্পণে।।

শেখ জলিল ২৭.০৭.২০১৭

Image: somewhereinblog.net

Wednesday, July 26, 2017

ভাবনা নিবাস

Image result for গাঙচিল ও ঝাউবন
বুনো ঝাউশাখায় বাতাস খেলা করে
খেলা করে ভ্রমরকূলেরা প্রতিদিন
প্রতিদিন দক্ষিণ থেকে উত্তরে ঘুরে
ঘুরেফিরে গাঙচিল উড়ে যায় দূরে
দূরে কোথাও নীড়ের সন্ধানে স্বপ্নীল
স্বপ্নীল পাখায় লেগে থাকে নানা রং
রংধনু সাত রঙ হেসে ওঠে মেঘে
মেঘ মেঘে যায় বেলা দুচোখ অধীর
অধীর আগ্রহ তার খোঁজে সেই দৃষ্টি
দৃষ্টি সে তো দৃষ্টি নয় অসীম আকাশ
আকাশ সুনীলে যার ভাবনা নিবাস
নিবাস ভেঙেছে ঢেউ সমুদ্র উথাল
উথাল পাথাল যেন হৃদয় উঠান
উঠান জুড়িয়া ছিলো সোনাঝরা সুখ
সুখ তার ভেসে যায় কাঁদে শুধু বুক
বুক সে তো বুক নয় শূন্য পত্রপুট!

শেখ জলিল ২৫.০৭.২০১৭

Image Credit: somewhereinblog.net


Monday, July 17, 2017

মনোসামাজিক বয়ঃবৃদ্ধি ও মূল্যবোধ

Image result for erikson's core struggles
মনোসামাজিক বয়ঃবৃদ্ধি ও মূল্যবোধ
- ডা. শেখ জলিল

সৃষ্টি সেরা জীব মানুষঅথচ অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে জন্মের পর মানুষই বেশি অসহায়একটি গাভীর বাচ্চা জন্মের পরপরই উঠে দাঁড়াতে সক্ষমএ ক্ষেত্রে মানব শিশু অক্ষমজন্ম থেকে মৃত্যু অবধি মানুষকে কঠিন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়এরকম কিছু বেড়ে ওঠার সংগ্রাম ও জীবনের প্রতিটি স্তর থেকে মূল্যবোধ গড়ে ওঠার গল্প আমার আজকে আলোচনার বিষয়

সদ্য জন্মগ্রহনকারী একটি শিশুর না থাকে কোনো জাত, কোনো ধর্ম, কোনো ভাষা বা কোনো মূল্যবোধ নির্দিষ্ট করেধীরে ধীরে জীবনের স্তরে স্তরে গঠিত হয় তার ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও মূল্যবোধজীবনের স্তরে স্তরে মানুষ যে মূল্যবোধে তার জীবনযাত্রা বেছে নেয় ও জীবনচর্চার সিদ্ধান্ত নেয় সব আসে তার অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক সামাজিক প্রভাব থেকেপ্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড এই স্তরের উত্তরণকে দেখিয়েছেন মনোজৈবিক আঙ্গিকেকিন্তু আরেক মনোবিজ্ঞানী এরিকসন এটাকে দেখিয়েছেন মনোসামাজিক আঙ্গিকে আমার আজকের আলোচনা এরিকসনের জীবনের নয় স্তরে আট সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই

১. নবজাত শিশু (জন্ম- বছর)- একটি শিশু জন্ম নিয়ে প্রথম দেখে তার পারিপার্শ্বিক বিশ্বদেখে মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনযদি মা-বাবা কাছে না থাকে সে অবলোকন করে তার পরিচর্চাকারীদেরএ সময় যদি তার মধ্যে পারিপার্শ্বিকতার প্রতি আস্থা জন্মে সে পৃথিবীকে তার উপযুক্ত স্থান বিবেচনা করেআর যদি মা-বা কিংবা পরিচর্চাকারীদের উপর আস্থা না জন্মে সে পৃথিবীকে মনে করতে পারে তার অনাকাঙ্ক্ষিত স্থান।  এ জন্য শিশুর মৌলিক চাহিদা ও নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয় মা-বাবাকেকাঁদলে কাছে ছুটে যাওয়া, খাবার দেয়া কিংবা বুকে তুলে নেওয়া এর মধ্যে প্রধানতম কাজআর ঠিক সময়মতো শিশু সেটা না পেলে তার মধ্যে অনাস্থা জন্ম নেয়।  মনোবিজ্ঞানী এরিকসন এটাকে নাম দিয়েছেন 'আস্থা বনাম অনাস্থা'

২. প্রাগশৈশব (১-৩ বছর)-  এ সময় শিশুর প্রথম আগ্রহ সৃষ্টি হয় খাবারের প্রতিকারণ এটা মানুষের মৌলিক চাহিদাএরপর তার আগ্রহ জন্মে নিজের কাপড় ও খেলনার প্রতিযদিও অনেক সময় বেমানান লাগে ২ বছর বয়সী একজন শিশু সে নিজের কাপড় পরে দেখাতে চায়- আমি এটা করেছিএ সময় মা-বাবা যদি সেটাকে উৎসাহ না দেয় বা অনুমোদন না করে সেই শিশুটির স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়সে পরবর্তী জীবনে ভুগতে পারে লজ্জা ও সন্দেহপ্রবণতায়শিশুর জীবনের এই সংগ্রামকে এরিকসন 'স্বতন্ত্রতা বনাম লজ্জা ও সন্দেহ' নাম দিয়েছেন

৩. স্কুলপূর্ব বয়স (৩- ৬ বছর)- স্কুলে যাবার আগের বয়সের বাচ্চারা তাদের নিজেদের কাজকর্মে উদ্যোগী হয়অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে  মেলামেশা ও খেলায় উদ্বুদ্ধ হয়এজন্য তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হয়যদি মা-বাবা ও গার্ডিয়ানরা তাদের এসব কাজকর্মে উৎসাহিত করে তবে তারা পরবর্তী জীবনে কর্মোদ্যোগী হয় ও নিজে নিজে কাজ করে সফলকাম হতে পারেআর এ বয়সে যদি প্রচুর বাধা-বিপত্তি ও বিধি-নিষেধের আওতায় থাকে তবে তারা নিজে উদ্যোগী হয়ে কোনো কাজ করতে শেখে না ও বিফলকাম হয়ে নিজেকে খুব দোষী মনে করেএরিকসন এটাকে নাম দিয়েছেন ' উদ্যোগী বনাম দোষী'

৪. মধ্যশৈশব (৬- ১২ বছর)- এ বয়সে এসে বাচ্চারা নিজেরা কী কী কাজ ভালো করতে পারে সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেমোদ্দা কথা এই বয়সটাই হলো আবিষ্কার ও পরীক্ষা-নিরীক্ষারসমবয়সী বন্ধুদের সাথে একটা প্রতিযোগিতামূলক ভাব থাকে তাদের মনেস্কুলের পড়া, হোমওয়ার্ক, খেলাধুলা ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে তাদের মূল্যায়ণ করে ও গর্ব অনুভব করেএ সময় বাড়ি থেকে যদি সঠিক মূল্যায়ণ না পেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করে ও সমবয়সীদের কাছ থেকে খারাপ আচরণ পায় তবে তারা খুব হীনমন্যতায় ভোগেএরিকসন এই জীবন সংগ্রামকে বলেছেন 'কর্মোদ্যোগ বনাম হীনমন্যতা'

৫. কৈশোর (১২- ২০ বছর)- ছেলেমেয়েরা এই সময় নিজেকে সন্ধান করে; আমি কে? আমি আমার জীবনে কী করতে চাই? ইত্যাদি বিষয় নিয়েতারা তাদের ভবিষ্যত কর্মজীবন খোঁজে  কিংবা কাউকে রোল মডেল করে জীবনযাপন করেযদি মা-বাবার প্রতি তাদের আস্থা জন্মে তবে তারা মা-বাবার আদলে নিজেকে পরিচিত করতে চায়আর যদি সেটা না হয় অন্য কাউকে তাদের জীবনের রোল মডেল করে নেয়এই সময়ে মা-বাবা যদি খুব চাপ দেয়- তোমাকে সমাজে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত হতে হবে, তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, তোমার পরিচয় হবে শিক্ষক, তোমাকে গায়ক হতে হবে তখন তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারেমা-বাবার ইচ্ছা তার নিজের পরিচিত হবার ইচ্ছা নাও হতে পারেআর হতে গেলেও সেখানে বিফলকাম হবার সম্ভাবনা থাকেনিজ দেশ ছেড়ে প্রবাসী কিংবা অভিবাসীদের ছেলেমেয়েরা তাদের পরিচয়দ্বিধায় ভোগে বেশিকারণ ভিন্ন দেশে এসে তাদের পারিপার্শ্বিক ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচারের ব্যাপক ফারাক দেখতে পায়মনোবিজ্ঞানী এরিকসন এটাকে বলেছেন 'আত্মপরিচয় বনাম পরিচয় দ্বিধা'

৬. প্রাগপূর্ণবয়স (২০-৩৫ বছর)- এই সময়ে ছেলেমেয়েরা কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পদার্পণ করেতাদের মন থাকে সঙ্গী খোঁজায় ব্যস্তসামাজিক মেলামেশাকারও অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য জীবনে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে তখন।  তারা তাদের জীবনের খুঁটিনাটি অন্যের সাথে শেয়ার করতে চায় যদি সম্পর্ক স্থাপনে তারা বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা কোনো কারণে এই পথ যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন তারা হয়ে যায় নিঃসঙ্গপরবর্তী জীবনে বিচ্ছিন্নতা বা নিঃসঙ্গতাই হয় তাদের নিত্য দিনের সঙ্গীএরিকসন এটাকে নাম দিয়েছেন 'অন্তরঙ্গতা বনাম বিচ্ছিন্নতা'

৭. প্রৌঢ় (৩৫- ৫৫ বছর)-  এই বয়সে এসে মানুষ ছেলেমেয়ে, পরিবার ও সমাজ নিয়ে উৎপাদনশীল ও অংশগ্রহণমূলক জীবন যাপন করেছেলেমেয়েকে বড় করা, মানুষ করা কিংবা সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করাই হয়ে ওঠে নিত্যদিনের  কাজবৈষয়িক উন্নতির সাথে সাথে এই সময়ে তারা জীবনের একটা অর্থপূর্ণ দিক খুঁজে পায়যদি এর  ‌ব্যাতিক্রম  ঘটে তবে তারা স্থবির হয়ে যায় জীবনেসঠিক পথ না পেয়ে নিজেকে কোনো সৃষ্টিশীল কাজেও নিবিষ্ট করতে পারে নাপ্রবাসী কিংবা অভিবাসীরা এই সমযে সম্মানজনক কোনো পেশা না পেয়ে আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেএরিকসন এই জীবনসংগ্রামকে বলেছেন 'সফলতা বনাম স্থবিরতা'

৮. মধ্যপূর্ণবয়স (৫৫-৭০ বছর)- মনোবিজ্ঞানী এরিকসন বয়সের এই স্তরকে প্রৌঢ় থেকে আলাদা করেন নিপ্রৌঢ় কিংবা মধ্যপূর্ণবয়সের সংগ্রাম মোটামুটি একই রকম

৯. শেষ বয়স (৭০- উর্ধ)- এই সময় মানুষ তার পূর্ণ জীবনের সফলতা ও বিফলতা নিয়ে ভাবতে থাকেভাবে সে কতোটুকু সফল কিংবা বিফল জগৎসংসারেকতোটুকু দিয়েছে পরিবার, সমাজ কিংবা দেশকেযদি ভালো কিছু করে থাকে তার জন্য তারা আত্মতৃপ্তিতে ভোগেআর যদি কোনো অসম্পূর্ণতা থাকে তবে তারা হতাশায় ভোগেকথনও ভাবে- আহা! আমি যদি এটা করতে পারতাম, ওটা করতে পারতাম ইত্যাদিমনোবিজ্ঞানী এরিকসন এটাকে নাম দিয়েছেন 'সম্পূর্ণতা বনাম হতাশা'

এভাবে জীবনের নয় স্তরে আট সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে মানুষজন্ম থেকে মৃত্যু অবধি চলে তার মূল্যবোধ অন্বেষণশেষ বয়সে কেউ বা পরিতৃপ্তি কেউ বা হাতাশা নিয়ে চলে যায় পরপারে।  এই তো জীবন যার কিছুটা গড়ে মানুষ, কিছুটা পূর্ব নির্ধারিত- সবই স্রষ্টার খেলা!


শেখ জলিল ১৩.০৭.২০১৭