Tuesday, December 6, 2016

স্বাধীনতা, তোমার বয়স বেড়েছে ঢের

গণনার হিসেবে তোমার বয়স বেড়েছে ঢের
যদিও চিরযৌবন কামনা তোমার আজীবন, তবু
দীর্ঘ পঁয়ত্রিশে চৌদ্দ কোটি সন্তানের হয়েছো জনক
বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ যেমন দায়িত্বে অটল সারাক্ষণ
জমায় গহন বুকে ভালোবাসার উত্তাপ অহর্নিশ
বটবৃক্ষ যেন তুমি এক দাঁড়িয়ে সংসারে অবিচল
ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরছো শেষে, তবু কেন আজো
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা নিতান্ত অপ্রতুল?

জন্মের সময় তুমি চেয়েছিলে সার্বভৌমত্বের স্বাদ
সোনাফলা জমি, নিজস্ব ভাষার প্রয়োজন ছিলো বেশি
কুলুকুলু নদীর জোয়ার, মায়ের আদর, বোনের সোহাগ
বাবার অপত্য স্নেহ, ভাইয়ের সাহসী দু’হাত কাছে পেয়ে
পরাধীনতার শৃঙ্খলটা ভেঙে দিলে তুমি তুমুল চিৎকার-
সেদিন তোমার কণ্ঠ শুনেছিলো পৃথিবীর তাবৎ মানুষ
একমাত্র তুমি ছিলে প্রধান বক্তা মঞ্চের মাঝখানে
কী যে অবাক বিস্ময় ছিলো জনতার জাগ্রত দু'চোখে!

তোমার ভুখন্ড দখলের বিদেশী চরেরা নেই কোনোখানে
বর্গী-ইংরেজরা হটে গেছে, গেছে পাকিস্তিানী হানাদার
এখন আমরা তোমার উর্বরা জমিনের কর্ষ অপেক্ষায়
জারি-সারি-ভাটিয়ালি গানের মাহেন্দ্র সুর মূর্ছনায়
প্রকম্পিত করবে প্রান্তর চারদিক, সেই প্রতীক্ষায়
জেগে আছি তিন যুগ প্রতিটি দুয়ারে কান পেতে স্থির-
আমরা সবাই সেই মধ্যবয়সী কিষাণ-কিষাণীর মতো
খরা ও বন্যার শেষে আশা করি অবিরাম ফসলের
আমাদের সবুজ নিবাসে স্বপ্নেরা হয়েছে দীর্ঘতর আরও
তোমার স্বপ্নের বাস্তবায়ন চাইছে আজ জনতার দাবী।

হে স্বাধীনতা, বয়স্ক বটের মহীরূহ ছায়া শুধু নও
নও শুধু সার্বভৌম সীমানা প্রাচীর এ বাংলার-
আমাদের চাই ফুলে ফলে ভরা ঊর্বশী গাছের সারি
মাঠে মাঠে ফসলের শোভা, কনক ধানের হাসি
গাঁয়ের দীঘল পথ, পরিপাটি শহর, উন্মুক্ত রাজপথ 
সন্ত্রাস-শোষণহীন এক স্বদেশ, অভয়ে পথচলা।
তোমার মুখের প্রতিশ্র“তি হোক ন্যায্য অধিকার আরও
আমাদের মাটির কুটিরে আসুক স্বস্তির ঘুম প্রতিরাতে
প্রতিটি প্রজন্ম পাক দু'বেলা দু'মুঠো ভাত-মাছ-ডাল
হে স্বাধীনতা, তবেই না তুমি আমাদের প্রগাঢ় অহংকার!  

শেখ জলিল ০৯.১২.২০০৬

No comments:

Post a Comment